আমাদের একটা ঘর হবার কথা ছিল। দক্ষিণমুখী পাখি ডাকা জানালায় দুই কামরার ঘর। ভাড়া বাসায় দেয়ালের রং তোমার পছন্দ নয়— প্রায়ই বলবে, ‘কবে যে বড় নতুন বাসায় থাকতে পারব!’ আলমারি কেনার টাকা জমাতে জমাতে খরচ হবে অন্যখাতে। বুক শেলফটাকে আমরা বানিয়ে নেব অস্থায়ী কেবিনেট আমাদের কাপড় রাখার। আলাদা আলাদা তাকে আমি এমনভাবে সেগুলো সাজিয়ে রাখব, দরকারি জামাটা খুঁজে পেতে এলেমেলো করতে হবে সব জামাকাপড়। রাগে সব ছুড়ে ফেলবে বিছানায়। আমি গুছিয়ে নেব।
রাত করে ফেরা আমার অভ্যেসে তুমি কখনোই মানিয়ে নেবে না। রাগ করবে। নটা বাজলে ফোন। সাড়ে নটা বাজলে ফোন। ১০টা বাজলে খুদে বার্তা দেবে, আজ দরজা খুলব না। যেখানে ঠেঙাতে গেছ সেখানে থাকো। তবু লিখে পাঠাবে, কাঁচা মরিচ নাই। কলা আনবে। মিশির জন্য অ্যালকুলি নিছিলে? মেয়েটা খেতে পারেনি দুপুরে। আমি খালি লিখব, ‘হ্যাঁ, ওকে।’ তুমি পালটা রাগের ইমোজি দেবে। পৌনে নটায় আমাকে ফোনে না পাওয়া সোয়া দশটায় দেখবে দরজায় কড়া নাড়ছি। দরজা খুলে হাঁটা ধরবে। আমি মরিচের ঠোঙাটা এগিয়ে দেব। না দেখার ভান করবে। খুঁজবে না বলা কিছু এনেছি কি না। হাত বাড়িয়ে হাতে গুঁজে দেব আচার বরই-তেঁতুলের। মুহূর্তে মুখটা আহ্লাদী হয়ে উঠবে আমার বউটার। খুচরো সদাই-পাতি নামিয়ে নেবে নিজের ঘরের। বলবে, সালাম দিয়ে ঢুকবা। ঘরে ঢুকে আলিঙ্গনে নেব তোমাকে। বলবে বিরক্ত হয়ে, সারা গায়ে সিগারেটের বাজে গন্ধ! উফ! বিড়িখোর কেন যে আমার কপালে জুটেছিল! আমি ভয়ে ভয়ে ঢুকব ওয়াশরুমে। মুখ-হাত ধোব, ব্রাশ করে নেব। ফ্রেশ হয়ে খেতে চাইব। তুমি বলবে, আগে নামাজ তারপর ডিনার। আমি নামাজে দাঁড়াতে বলবে, ফটকা নামাজ যেন না দেখি। শেষ করো। মিশিকে দেখে আসি। নামাজ শেষ করে আমি ফোন হাতে নেব। ফিরে এসে বকবে আমাকে। সারাদিনই তো ফোন নিয়ে থাকো। বাসায় না করছি না? ফোন রেখে তোমাকে ধরব। কোলে করে নিয়ে যাব কিচেন অব্দি। খাবার গরম দেব একহাতে। অন্যহাতে তোমার হাত।
একদিন বিষ্যুদবার। দেরি করে ফিরব আগেই বলে রাখা বউটা আমার রাত্রি সাড়ে ১০টায় টেক্সট করবে, দুনিয়ায় কাদের এত রাত অব্দি কাজ থাকে আমি জানি না। কাজের নামে ঢোঢো। আড্ডা মেরে ফিরবে। গাঁজা-ফাজা টানবে। আর আমাকে বলবে, কাজ। মিথ্যুক! একটাদিনও শয়তানের বাচ্চার জন্য টাইমলি ঘুমোতে পারি না। আমি লিখব, ‘সোনা আজ বিষ্যুদবার।’ ‘বিষ্যুদবার তোকে বোঝাব, বাসায় আয়।’ তুমি লিখবে। পৌনে ১১টায় আমি পৌঁছব ঘরে। দরজায় নক করার পর খেয়াল হবে দরজা তো খুলেই রেখেছে আমার পাখিটা। ঘরে ঢুকে টিফিন বাটি রাখতেই কানে আসবে— ‘১৫ মিনিটের মধ্যে সব শেষ করে লাইট অফ করে শুতে আসবা। না জড়িয়ে ধরলে আমার ঘুম আসে না।’ আমি আচ্ছা বলে চটজলদি সব শেষ করে বারান্দায় যাব। তুমি বলবে, ‘যা তুই আজকে! তারপর দেখ কী করি!’ বারণ শুনেও যাব আমি। ফিরব ২ মিনিটে। ব্রাশ সেরে বিছানায় পড়ব ধপাস করে। তোমার পায়ের ওপর পা। পা নেবে সরিয়ে। ধরব জড়িয়ে। হাত সরিয়ে দেবে। খুনসুটি রাগ অভিমানে আমি হাত ছুঁয়ে দেব অভিসারের গভীরে। রাগ করে বলে উঠবে, অসভ্য। আমি বলব হ্যাঁ। তুমি বলবে ধরে থাকো। আমি হেসে উঠব হে হে। বলবে ওটা নয়, আমাকে ধরে থাকো। থাকো জড়িয়ে। নড়বে না। আমি ঘুমোব। তোমার চুলে নাক ঘষে শুয়ে থাকব। ১০-১৫ মিনিটে শুনব তোমার গভীর নিশ্বাস। আস্তে ধীরে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে স্ক্রিনের লো লাইটে বিজনেস নোটিফিকেশনগুলো আরেকবার দেখে নেব। পৃথিবীর অন্তর্জালে লিখে আসব— ‘বিষ্যুদবার রাত হওয়া চাই দীর্ঘ।’ সাইলেন্ট মোডে দিয়ে ফোন যাব ঘুমিয়ে তোমার ঘুমের সুরে। নড়ে উঠবে খাটটা। ঘুমের মধ্যেও দেখাবে মেজাজ। উলটো দিকে আমি পাশ ফিরব। আমাকে জড়িয়ে যাবে ঘুমিয়ে। ভালোবাসা বুকে নিয়ে শুয়ে থাকব যৌথ বালিশে আমরা দুজনে। বিষ্যুদবারের নিয়মিত রাতে সংসার না হওয়া আমার ভাই ব্রাদাররা পড়বে সে লেখাটি— ওহ দাদা তারা বলবে। অথচ দীর্ঘ রাতের আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে নিয়মিত রাতের আয়োজনে আমি ঘুমিয়ে যাব প্রিয়তমা স্ত্রীকে বুকে নিয়ে। তোমার সাথে সেই ঘর দু কামরার— আর সকাল শুক্রবারের।
বেলা করে উঠব যখন তখন সকাল সাড়ে আটটা।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন