“ইকবাল মাশিহ- দ্য আননোন লিটিল হিরো”
ইকবালের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং ইকবালকে মাত্র ৮ ডলার বা ৮০০ রুপিতে একটা কার্পেট বয়ন কারখানায় বিক্রি করে দেন। ৮ ডলারে বিক্রি হয়ে যাওয়া ইকবালের বয়সও তখন মাত্র ৮।
কারখানায় শুরু হয় ইকবালের অমানবিক পরিশ্রম। প্রতি সপ্তাহে কাজ করতে হতো ১২০ ঘন্টা বা দিনে ১৭ ঘন্টারও বেশী। যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য পায়ে লম্বা শেকল দিয়ে আটকে রাখা হতো ইকবালসহ তার সমবয়সী অন্যান্য দাস শিশুদের।
ইকবালের বয়স যখন দশ তখন সে কার্পেট বয়ন নামক এই জেলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু তার দূর্ভাগ্য, পালিয়ে যাওয়ার তিনদিনের মাথায় সে আবার ধরা পড়ে এবং পুনরায় বিক্রিত হয়। এবার তার মূল্য আগের চেয়ে একটু বেড়ে হয় দশ ডলার। সপ্তাহে কাজও বাড়ে। হয় ১৪০ ঘন্টা।
কিছুদিন পর ইকবাল আবার পালায়– ‘স্লাম ডগ মিলিয়নিয়ার’ ছবির মতো মানব পুরিষের ভিতর দিয়ে। ইকবাল এবার একটা এতিম খানায় আশ্রয় পায় এবং ইয়াতীমখানার তত্বাবধায়ক হাফেজ ইব্রাহীম তাকে স্থানীয় এক স্কুলে ভর্তি করে দেন। অসাধারণ মেধাবী ইকবাল পাঁচ বছরের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা দুবছরেই শেষ করে।
স্কুলে পড়াকালীন সময় ইকবাল Bonded Labour Liberation Front (BLLF) এ যোগ দেয়। যাদের কাজ হলো বিভিন্ন কারখানা থেকে শিশু দাসদের মুক্তি করা। এই সংগঠনের মাধ্যমে ইকবাল প্রায় ৩০০০ শিশুকে বিভিন্ন কারখানাকে মুক্তি বা পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। ১৯৯৪ সালে বোস্টনে ইকবালকে Reebok Human Rights Award এ ভূষিত করা হয়। যেখানে ইকবাল বলে, আমেরিকা থেকে আব্রাহাম লিংকন যেমন দাসত্বকে বিলুপ্ত করেছেন তেমনি আমারও কাজ হলো পুরো পৃথিবী থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন শিশু দাসদের মুক্তির আন্দোলন করে সব শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। কোনো শিশু থাকবে স্কুলে আর কোনো শিশু থাকবে কারখানায় সেটা হবেনা। প্রতি সপ্তাহে ১৪০ ঘন্টা কাজের যন্ত্রণা যে করে সেই কেবল বোঝে; অন্য কউ নয়।
১৬ বছরের সুইডিশ শিশু Greta Thunberg যেমন School strike for climate ম্যুভমেন্টের মাধ্যমে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে। ইকবালও তেমনি শিশু দাস মুক্তির আন্দোলন সূচনা করে।
কিন্তু ইকবালের সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। শিশু দাসদের মুক্তি আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই বোস্টন থেকে লাহোরে ফিরে আসার কিছুদিন পরই কার্পেট মাফিয়ারা ইকবালকে গুলি করে হত্যা করে। তখন তার বয়স মাত্র বারো বছর।
শিশু ইকবালের এই লিগেসিকে চির স্মরণীয় রাখার জন্য United States Labour Department ২০০৯ সালে “The Iqbal Masih Award” এর সূচনা করে।
মাত্র বারো বছরের অল্প জীবনে প্রায় ৩০০০ শিশু দাসকে মুক্তির নায়ক ইকবাল মাশিহর জন্মদিন ছিলো ২৯ অক্টোবর। জন্মদিনে শ্রদ্ধা দুনিয়ার লিটিল হিরো। আপনি বেঁচে থাকলে এতদিন কোটি শিশু শ্রম জীবনের পরিবর্তে পেতো পৃথিবীর মুক্ত বাতাস আর স্কুল।
Hats off to you, The Little Hero। আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার কর্মে। আমরা আপনাকে মনে রাখবো।
[ইকবাল মাশিহ'কে নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখতে https://youtu.be/m36JalrYfp8]

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন